প্রমোশনকে কার্যকর করতে হলে
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ব্যবসায়ের জন্য প্রমোশন, ব্রান্ডিং, মার্কেটিং বিপনন প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন একথা আর অন্ধের ভাই কানাকেও বলে দিতে হয়না। কিন্তু প্রমোশন করলেই কি ব্যবসায় বা বেচাকেনা হয়ে যাবে এমন কি কোনো কথা আছে। না নেই। কিন্তু আমরা অনেক সময় তা ই মনে করি। যে বিজ্ঞাপন দেখবো আর বিজ্ঞাপনের তোড়ে মানুষ পাগল হয়ে আমার পন্য কেনা শুরু করবে। এভাবে ভেবে আমরা আবেগ থেকে ভুল সিদ্ধন্ত নেই আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হই এবং এক পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলি। কিন্তু প্রমোট করলেই যে ইতিবাচক বিশাল প্রমোট হবে তা কিন্তু নয়। এজন্য যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনের আগে আমরা কয়েকটা কথা জেনে নেই। এই কথাগুলো সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আপনার একটা ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে বিলবোর্ড পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে প্রমোশনের সময় নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করুন।
পেশাদারিত্বের কথা মাথায় রাখুন:
আপনি যাই করুন না কেন, সেটা পেশাদারী মনোভাব থেকে করবেন। আপনার ভিজিটিং কার্ডটা দেখেই কেউ যদি মনে করে ‘‘ও বুচ্চি চাকরী পায়না দেখে নিজে নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা আরকি’’ তাহলে কিন্তু শেষ। সেটা এমনভাবে তৈরী করতে হবে যেন ভিজিটর বোঝেন যে আপনি ই কমার্স করতে আসছেন এবং জিনিসটা বোঝেন এবং উন্নত রুচিমানের ব্যাপারে আপনি সচেতন ফলে আপনার পন্য বা সেবাও সন্তোষজন্ক হবে বলে আশা করা যায়।
ভোক্তাদের চিন্তা বোঝা ও বাজার বিশ্লেষণ:
ই কমার্স সেক্টর আমাদের এখানে নতুন। আমরা অনেকেই জানি না আমার শপে কাস্টমার আসবে কিনা? অনেকে কি পন্য বেচবেন? কিভাবে বেচবেন সেটা সিদ্দান্ত নেয়ার আগে ব্যবসায় শুরু করেন। এজন্য আপনি ব্যবসা শুরুর আগে অথবা বিপনন শুরু আগে আপনার টার্গেট বায়ারদের উপর জরিপ বা মতামত বা গবেষণা করে দেখতে পারেন। যে গ্রাহকেরা কোন ধরনের পন্য বেশী কিনতে আগ্রহী? কিভাবে হলে তারা স্বাচ্চন্দ্য বোধ করবে? কেমন দাম বিক্রি বাড়ানোর সহায়ক হতে পারে? অনলাইনে ক্রয়ের ক্ষেত্রে মানুষের মাথায় কি ধরনের চিন্তা কাজ করে? ুকিভাবে পেলে মানুষ খুশি হবে? তারপর আপনি আপনার ব্যবসায়িক প্লান ও প্রচার কৌশল ঠিক করেন। ৫০ হাজার টাকার এড প্লান তৈরীর আগে ৫ হাজার টাকার একটা এনালাইসিস ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ের আউটপুটকে দ্বিগুন করে দিতে পারে।
একবার নয় বার বার:
একটা এড একবার দিলেই সবার চোখে পড়বে বা সবাই আপনার কথা মনে রাখবে সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আপনি একজন সিনেমার নায়ককে এজন্য চিনেন যে তার ছবি বার বার মিডিয়ায় আসে। যে অভিনেতার নামে একদিন মাত্র একটা নিউজ হয়েছে তার কথা আমি আপনি হয়তো তখনই ভুলে গেছি। একবার এড দিয়ে মানুষের মনে থাকা যায়না। বাংলাদেশে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পত্রিকা এড দিয়ে, একটি সাইফুরস, অন্যটি ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজ। যদিও টিকে থাকার জন্য তাদেরকে কোয়ালিটি প্রমাণ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কখনো কখনো নতুন ভাবে উপস্থাপন:
বার বার এডদিতে হবে এর অর্থ এই নয় যে এই বিজ্ঞাপন বছরের পর বছর প্রচার হবে। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন মাল্টিন্যাশনাল কোস্পানীগুলো কয়েকদিন পর পর তাদের টিভি এড পরিবর্তণ করে নতুন করে এড দেয় আবার এর অর্থ এই নয় যে আপনি একই মেসেজ দিয়ে প্রতি মাসে নতুন নতুন বিজ্ঞাপন বানাবেন। আপনার প্রতিটি নতুন এড এ যেন নতুন একটা মেসেজ থাকে এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
ভাবমূর্তি ধরে রাখা:
এটা এক ধরনের ইউনিক ধারণা তৈরী করা। যেমন ধরুন হলুদ কোনো বিলবোর্ড দেখলে আমরা মনে করি এটা সিটিসেলের এর এড, লালা হলে এয়ারটেল বা রবি, আকাশী হলে গ্রামীণ ফোণ ইত্যাদি। আপনার নিজের নাম লোগো ও পন্যের সাথে মিলিয়ে একটা বিজনেস কালার ঠিক করা থাকতে হবে। প্রতিটি কাজে সে কালারের প্রাধান্য রেখে কালার ম্যাচ ও ডিজাইন সেট করতে হবে। যাতে করে রং এর ব্যবহার দেখে দেখেই কাস্টমার আন্দাজ করতে পারে এটা কাদের এড হতে পারে। এই জিনিসটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও পেশাদার হিসেবে আপনারকে ভোক্তার সামনে তুলে ধরবে। এ ব্যাপারে আপনার কম্পিটিটররা কি ধরনের কালার ব্যবহার করছে খেয়াল করুন। কারো সাথে ম্যাচ না করে কনট্রাস্ট করার চেষ্টা করুন।
একাধিক কৌশল ব্যবহার করা:
আপনি কখনোই অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো একটার উপর নির্ভর করবেন না। আবার যখন ফেইসবুকে ইমেজ আকারে এড দিবেন একই ধরনের পদ্ধতি বার বার ব্যবহার করবেন না। আপনার কালার ও থিম ঠিক রেখে বিজ্ঞাপন উপস্থাপন বৈচিত্র আনার চেস্টা করুন। হতাশার কথা হলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি ভালো রেসপন্স নাও পেতে পারেন। যেমন ধরুন মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন সার্ভিস, ভাস ও অপার ডিক্লারেশন করে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। যেমন ৭৮৯ কল করে চিকিৎসা পরামর্শ চেয়ে যে পরিমাণ কাভারেজ করা হয়েছে। যারা ৭৮৯ এর হেল্প নেন। সেখান থেকে কোম্পানী কি আসলে নে পরিমাণ রেভিনিউ আহরণ করতে পারেন? হয়তো পারে না। তাহলে কি এটা কোম্পানী লোকসান ইনভেস্টমেন্ট হলো। না, তা নয়। সব সার্ভিস বা সব এডে সমান সাড়া আসেনা। তবুও একটা সার্ভিস দিয়ে কোম্পানী তার কম্পিটিটরদের চেয়ে এগিয়ে থাকেেলা আর এ উপলক্ষে এড দিয়ে টিভির পর্দায়ও নিজেদের শিক্তশালী উপস্থিতি প্রকাশ করে গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখলো।
ইউনিক মেসেজ:
আপনি যে মাধ্যম ব্যবহার করেন আর যে ধরনের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করুন না কেন আপনিাকে আপনার ফার্ম বা ব্যবসা সম্পর্কে একটা ইউনিক মেসেজ ক্যারি করতে হবে। যাতে সবাই বোঝে আপনার কোম্পানী আসলে কি সে অনুযায়ী আপনার শপের কাছে তাদের চাহিদা তৈরী হবে। তারা প্রত্যাশিত সেবা বা পন্য আপনার শপে খুজবে পেয়ে গেলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। যেমন ধরুন মিল্্কভিটা দুধ মানেই হলো সমবায়ের মাধ্যমে সংগৃহিত তরল দুধ এটা আমরা সবাই বুঝতে পারি। ফখরুদ্দিন বিরানী মানে কি সেটাও আর বলে দেয়ার অপেক্ষা থাকে না।
এটা খেয়াল রাখবেন যে কখনো অধিক প্রত্যাশা তৈরী করবেন না। যাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন আপনি এমনভাবে এড দিলেন কাস্টমার মনে করলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাল বাসায় এসে হাজির হবে কিন্তু আসতে লেকে গেলো ৪০ ঘন্টা কাস্টমার বিরক্ত হলো, অথচ আমাদের দেশে ৭২ ঘন্টায় মাল পেলেও সেটা কম কথা নয়।
আপনিই অন্যদের মত নয়:
মনে রাখুন বাজারে আপনার মতো আরো ২০টি কোম্পানী আছে। এখন একজন ক্রেতা কেনা বাকী ১৯টা বাদ দিয়ে আপনার কাছ থেকে পন্য নেবে বা প্রচলিত দোকান থেকে পন্য না কিনে আপনার ই শপ থেকে কিনবে। এটা আগে আপনি নিজে বুঝুন, নিজে ভাবুন, নিজে কনভিন্সড হোন এবং তারপর আপনার বিজ্ঞাপানে সেটাকে সুন্দর ভাবে তুলে ধরুন।
বাজার বৃদ্ধির কথা ভাবুন:
আপনি যে ধরনের পন্য বিক্রয় করেন সে ধরনের পন্য অন্য যারা বিক্রি করে আপনি তাদের কাস্টমার আনার কথা ভাবতেই পারেন। কিন্তু আপনি যদি নিজে বাজার তৈরী করে অর্থ্যাৎ কাস্টমার সৃষ্টি করে বাজার বা বিক্রি বাড়াতে পারেন। এটা আপনার জন্য আসল সফলতা। যে ব্যক্তি আপনার হাত ধরে ই কমার্সে বেচাকেনা করতে শিখলো বা আপনার মাধ্যমে জীবনে প্রথম একজোড়া জুতা অনলাইন থেকে কিনলো সে ব্যক্তি সন্তুস্ট হলে সে কিন্তু আপনার কাস্টমার হিসেবে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং আপনার শপের প্রতি তার একটা সিমপ্যাথী থাকতে পারে। সূতরাং প্রমোশনের সময় ভাবুন যে ই কমার্সের অথবা আপনি যে পন্যটি বিক্রয় করছেন তার অনলাইন বাজার শুরু করতে আপনি ভ’মিকা রাখবেন। বাজার তৈরী করলে সবাই সুবিধা পাবে, আপনার একার করার দরকার কি? এ ধরনের সংকীর্ণ মানষিকতা কখনো মনে ঠাই দেবেন না।
কোয়ালিটিই শেষ কথা:
উপরের সব কৌশলই ব্যর্থ হবে যদি ক্রেতারা প্রথমবার আপনার পন্য কিনে সন্তুষ্ট না হয়ে। এজন্য কোয়ালিটি ও সেবাই আসল কথা। এজন্য এটাই আগে ঠিক করুন এবং ঠিক রাখুন। এবং টিকে থাকার জন্য এটাই আপনাকে কাজ দেবে। মনে রাখবেন আপনার একজন কাস্টমার যদি পন্য কেনে সন্তুষ্ট হয় তাহলে তিনি আরো ২ জনকে বলবেন অথবা বলবেন না। কিন্তু কেউ যতি অসন্তুষ্ট হয় তিনি আরো ১০ জনের কাছে আপনার বদনাম করবেন। সূতরাং সর্তক থাকুন।
আপনার ভাবটা ধরে রাখুন
এই প্রতিটি পরামর্শ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে গন্য হবে। সেটা হোক 160 ডিজিটের একটা এসএমএস, অথবা হোক 300 শব্দের একটা চিঠি । আপনার সাফল্য কামনায়- জাহাঙ্গীর আলম শোভন